সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রাগের লাভ-ক্ষতি

ধর্ম ডেস্ক:
স্বার্থহানি কিংবা কারও থেকে তিরস্কৃত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছায় মানুষের মধ্যে যে আবেগ আর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রোধ বা রাগ বলে। আল্লামা ইমাম বায়যাবি (রহ.) রাগের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় সংকল্পের সময় অন্তরে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাকেই ক্রোধ বলে।’ রাগ মানুষের স্বভাবগত বিষয়। যা মানুষের অন্তরে সৃষ্টি হয়। ফলে তার বহিঃপ্রকাশ হয় কখনো হাত-পা থেকে, আবার কখনো মুখ থেকে অশ্লীল কথা আর কটুবাক্যের মাধ্যমে, আবার কখনো কাজেকর্মে, আখলাক-চরিত্রে।

ক্রোধান্বিত ব্যক্তি চার প্রকারের : হাদিস শরিফে এসেছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার রাগ সম্পর্কে আলোচনাকালে বলেন, ক্রোধান্বিত ব্যক্তি চার ধরনের। যাদের প্রথম ও দ্বিতীয়জন না প্রশংসনীয়, না নিন্দনীয়। কেননা তাদের রাগ আসা ও যাওয়া উভয়টির ধরন এক। অর্থাৎ প্রথমজন হলো এমন যে, তার রাগ আসে তাড়াতাড়ি আবার তাড়াতাড়ি চলে যায়। আর দ্বিতীয়জন হলো এমন যে, তার রাগ আসা ও যাওয়া উভয়টিই হয় বিলম্বে। তবে হ্যাঁ এই চার ব্যক্তির মধ্যে যার রাগ আসে দেরিতে কিন্তু যায় তাড়াতাড়ি; সেই সর্বাধিক উত্তম। পক্ষান্তরে যার রাগ আসে তাড়াতাড়ি কিন্তু যায় দেরিতে; সে সর্বাধিক নিকৃষ্ট। -আহমাদ : ৮/৪৬-১১৫২৫

রাগ না করার উপদেশ : হাদিসে শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ কোরো না।’ লোকটি উপদেশ কয়েকবার কামনা করলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেকবারই বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ -সহিহ বোখারি : ২/৯০৩-৬১১৬

রাগের লাভ-ক্ষতি : কোনো অবস্থায়ই রাগ না করা। উত্তেজনাকর মুহূর্তে ধৈর্যকে নিজের সম্বল বানানো বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ -সুরা আল বাকারা : ১৫৩

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘ইমান ও পরিতৃপ্তি থেকেই আসে শান্তি-সাহায্য। আর সন্দেহ ও ক্রোধ থেকে আসে দুশ্চিন্তা-দুঃখ ও কষ্ট।’

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যশীলরাই সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।’ সব ধরনের আক্রমণাত্মক, হিংসাত্মক কার্যাবলি থেকেই রাগ সংঘটিত হয়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(আশ্রয় চাই) অনিষ্ট থেকে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।’ -সুরা আল ফালাক : ০৫

মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববি (রহ.) ঈর্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘অন্যের প্রাপ্ত নেয়ামতের অপসারণ কামনা করাই হলো- ঈর্ষা, আর এটি হারাম।’ হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে হিংসা কোরো না এবং পরস্পরের থেকে স্বীয় মুখ ফিরিয়ে রেখো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কোরো না; বরং তোমরা এক আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ -সহিহ মুসলিম : ২/৩১৬-২৫৬৩

প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছায় রাগের বশীভূত হয়ে কারও কোনো ক্ষতি করলে, তার দায়ভার এড়ানো যায় না। রাগের মাথায় কারও সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ না। রাগ হলো- জ¦লন্ত কু-লির মতো, যা দাউ-দাউ করে জ্বলে। তাতে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাগ নানাবিধ অসুস্থতা ডেকে আনে। সুতরাং কোনোভাবেই রাগ নয়। মনে রাখতে হবে, যারা রাগ দমন করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, এবং তাদের খাঁটি মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৩৪

যাকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন তারচেয়ে সফল আর কে? দুনিয়ার জীবন-সংগ্রামে আমরা সবাই ভাই ভাই। সুতরাং ভাই ভাইয়ের সঙ্গে পরস্পরে দ্বন্দ্ব কীসের? তার সঙ্গে রাগ কেন? মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো।’ -সুরা হুজরাত : ১০

ক্রোধ দমনে নুর অর্জিত হয় : নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাগ-গোস্বাকে প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও তা দমন করে, আল্লাহতায়ালা তার বিনিময়ে তার অন্তরে ইমান ও আমান তথা ইমানের জ্যোতি ও প্রশান্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন। -সুনানে আবু দাউদ : ২/৬৫৯

প্রকৃত বীর : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন, তেমরা কি জানো প্রকৃত বীর কে? (সাহাবায়ে কেরাম বলেন) আমরা বললাম, যে লোকদের ধরাশায়ী করে সেই প্রকৃত বীর। নবী কারিম (সা.) বললেন, না, বরং যে নিজেকে রাগের সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই প্রকৃত বীর। অর্থাৎ ব্যক্তি যখন খুব রাগান্বিত হয়, চেহারা লাল হয়ে যায়, লোম দাঁড়িয়ে যায়, অতঃপর উক্ত রাগকে দমন করে। -ইবনে কাসির : ১/৪০৫

হাদিসে নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘সেই ব্যক্তি প্রকৃত শক্তিশালী বীর নয়, যে মানুষকে আছাড় দেয়; বরং সেই ব্যক্তিই প্রকৃত শক্তিশালী বীর, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ -সহিহ বোখারি : ২/৯০৩-৬১১৪

শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রশংসনীয় বীরত্বের মাপকাঠি দৈহিক শক্তির নাম নয়। বরং ক্রোধ সংযম করার আত্মিক শক্তিই হলো- মাপকাঠি। যেমনটি নবী কারিম (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়ে নিজের নফসের বিরুদ্ধে জেহাদ করা বেশি কঠিনো।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION